হোম
এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টার কঠিন ম্যেলয়েড লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত এক তরুনীর নতুন জীবন দিল বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন চিকিত্সার মাধ্যমে

এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টার সফল ভাবে বোন ম্যারো পদ্ধতিতে চিকিত্সা করে কঠিন ম্যেলয়েড লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত ২৭ বছর বয়সী এক তরুণীকে নতুন জীবন এনে দিল। ওই রোগিনী প্রচন্ডভাবে পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন এবং প্রায় শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন। ডা: জয়দীপ চক্রবর্তী, এচওডি - হেমাটো অংকলজি ও বিএমটি, এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টার এবং তার টিম সফলভাবে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন চিকিত্সা সম্পন্ন করে।
২৭ বছর বয়সি সাথী কর্মকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন, তিনি পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন। এইচসিজি-এর কাছ থেকে পরামর্শ নেবার আগে তিনি তার ওই চিকিত্সার জন্য অনেকগুলি হাসপাতালে ঘুরেছিলেন। কিন্তু কোন চিকিত্সকই তার ওই সমস্যার কারণ ধরতে পারেননি। ২০১৯-এর অক্টোবর মাস থেকে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। তিনি তার পিঠে কঠিন ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন, পরবর্তী সময়ে কঠিন অবস্থায় চলে যায়। ওই অবস্থায় তিনি বসতেও পারেন না, এমনকি তার হাঁটতেও সমস্যা হচ্ছিল। দিন দিন তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়ছিল। পরিবারের লোকজন তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন। অনেকগুলি হাসপাতালে ঘুরে আসার পরে তিনি এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টার ডা: জয়দীপ চক্রবর্তীর কাছে যান।
এই অবস্থায় রোগিনীর পরিবারের সদস্যরা যখন সাথীর অবস্থার কথা জানতে পারেন তখন তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাহলেও ডা: জয়দীপ চক্রবর্তী এবং তার টিম রোগিনীর পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তাদের সান্ত্বনা দেন এবং এই চিকিত্সার মাধ্যমে এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময়ের বিষয়ে বাড়ির সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। এরপর সাথীর পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য সাথীকে ভর্তি করেন। ভর্তির পর বোন ম্যারো অস্পিরেশন পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় কেমো সাইকেল সম্পন্ন হয়। এরপরে 2020 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়। সফলভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করেন ডা: জয়দীপ চক্রবর্তী নেতৃত্বে এইচসিজি ইকেও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ও নার্সের একটি টিম। সাথীর বোন ছিলেন দাতা। অনেক জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে এই অপারেশনটি সফলভাবে শেষ হয়। সুস্থ হয়ে হাসিমুখে রোগিনী বাড়ি ফিরে যান। প্রতিস্থাপনের 10 মাস পরে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সমর্থ হন।
বোনম্যারো প্রতিস্থাপনকে স্টেম সেল প্রতিস্থাপন হিসেবেও বলা হয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে মানবদেহের রক্ত উত্পাদনকারী সুস্থ স্টেম সেল কে অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত বোন ম্যারোর প্রতিস্থাপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যখন বোন ম্যারো তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারেনা কিংবা পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত কোষ উত্পন্ন করতে পারেনা তখন বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই চিকিত্সা পদ্ধতি সম্পর্কে ডা: জয়দীপ চক্রবর্তী, এচওডি - হেমাটো অংকলজি ও বিএমটি, এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টার কলকাতা বলেন, 'পরামর্শের সময় রোগিনী তীব্রভাবে পিঠের ব্যথা অনুভব করছিলেন। পক্ষে হাঁটাচলা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। আর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। তার ওই অস্বাভাবিক পিঠের ব্যথা প্রথমে সেক্রলাইটিস বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল পরে এটিই কঠিন ম্যেলয়েড লিউকোমিয়ায় রূপান্তরিত হয়। বিভিন্ন রক্ত ঘটিত রোগ ও ব্লাড ক্যান্সারের চিকিত্সায় বোনম্যারো প্রতিস্থাপনই আদর্শ চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। রোগিনীর বোন সম্পূর্ণভাবে হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন ম্যাচ, তাই তাকেই আদর্শ ডোনার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এভাবেই সফলভাবে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। রোগিনী এখন সম্পূর্ণভাবে সুস্থ। মধ্যে আর কোন রোগের লক্ষণ নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'চিকিত্সার সময় প্রাথমিকভাবে কেমোথেরাপি যখন করা হয় তখন তার নিউত্রোপেনিক সেপসিস ও ড্রাগ সম্পর্কিত হেপাটাইটিস দেখা দিয়েছিল, যা কঠিন ম্যেলয়েড লিউকোমিয়ার একটি মারাত্মক জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত। চিকিত্সক দলের ধারাবাহিক প্রয়াসে এবং হাসপাতালের উত্কৃষ্টমানের নার্সিং পরিষেবার সাহায্যে এই রোগিনীর চিকিত্সা পদ্ধতি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।'
এই সফল চিকিত্সা পদ্ধতি সম্পর্কে কলকাতার এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টারের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা: বীরেন্দ্র কুমার বলেন, ' এইচসিজি সব সময় রোগীদের জন্য সর্বোত্তম ও সর্বাধুনিক চিকিত্সা পদ্ধতি প্রদান করে থাকে। আমি গর্বের সঙ্গে বলছি যে আমাদের বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন চিকিত্সা বিএমটি ফেলোশিপ সার্টিফাইড। এবং জুনিয়র নার্সিং স্টাফেরা বোনম্যারো প্রতিস্থাপন ফেলোশিপ- এ নথিভূক্ত, যা পরিচালনা করে থাকে এইচসিজি এবং তারা বিএমটি-এর নির্দিষ্ট ট্রেনিং প্রাপ্ত। যেহেতু এই চিকিত্সা দীর্ঘমেয়াদি এবং অনেক সময় ধরে রোগীর চিকিত্সা করা হয় তাই নার্সদের অত্যন্ত যত্নসহকারে রোগীর পরিচর্যা করা প্রয়োজন হয়। আমি এই রোগিনীর সফল চিকিত্সার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত চিকিত্সক ও নার্সদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা একাধিক বোনম্যারো প্রতিস্থাপন চিকিত্সা সম্পাদন করে আমাদের এই ক্লিনিকের দক্ষতাকে অনেক উঁচু করে তুলে ধরতে পেরেছি। কোভিড-19 মহামারীর চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও আমরা নিরাপদ পরিবেশে এবং কার্যকর যত্ন সহকারে আমাদের রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিত্সা পদ্ধতি প্রদান করে চলেছি।'
রোগিনী সাথী কর্মকার বলেন, 'আমি এইচসিজি ইকেও ক্যান্সার সেন্টারের বিশেষজ্ঞদের টিমের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের সাহায্য ছাড়া আমি নতুনভাবে জীবন ধারণ করতে পারতাম না। এটা আমার কাছে ছিল একটা দুঃস্বপ্নের মত। আমি ভবিষ্যতের সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এইচসিজি ইকেও-এর চিকিত্সকেরা আমার জন্য সেরা যত্ন ও চিকিত্সা দিয়েছেন। এটি আমার জন্য দ্বিতীয় জীবন এবং আমি অত্যন্ত খুশি যে আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছি।'